বাংলাদেশী সমাজের প্রেক্ষাপটে অভিনেতা হিসেবে ক্যারিয়ার গড়া সব সময়ই দুঃসাহসিক একটি সংকল্প। তবুও অভিনয়কে ভালবেসে বহু তরুণ-তরুণী অনিশ্চিত এই ভবিষ্যতের দিক
আজকে আমরা এমনই একজন থিয়েটার কর্মীর গল্প শুনবো। যিনি ত্যাগ, পরিশ্রম আর
স্বপ্নকে পুঁজি করে জীবন সংগ্রামে জয়ী হয়ে নিজেকে গড়ে তুলতে চাইছেন একজদ দক্ষ অভিনেতা
হিসেবে। তিনি রাকিব সিদ্দিকী, আমাদের আজকের বাস্তবতার নায়ক।
রাকিব সিদ্দিকীর ফেসবুক স্ট্যাটাসটি বিনোদন.বিজ পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে
ধরা হলো-
আমি একজন থিয়েটার কর্মী..... সপ্তাহে তিন দিন ‘ফার্মগেট’ থেকে পায়ে হেটে
“টিএসসি” গিয়ে থিয়েটার করে নিজেকে তৈরি করেছি।
পাশাপাশি টানা তিন বছর কোন একজন
ডিরেক্টরের পিছনে সময় দিয়ে একটি সিনেমায় অভিনয় করার সুযোগ পেয়েছি, চরিত্রটি নিয়ে নানান
রকম স্বপ্ন দেখেছি,
ভেবেছিলাম বড় পর্দায়ে নিজের অভিনয় টুকু দেখে নিজের অভিনয়ের স্বাদ নিজেই
গ্রহণ করবো।
নিজেকে চরিত্রের প্রয়োজনে প্রস্তুত করছিলাম সাথে সাথে অপেক্ষায় ছিলাম কবে
শুরু করবেন ডিরেক্টর সিনেমাটির শুটিং।
দীর্ঘদিন অপেক্ষার পরে সিনেমাটির শুটিংয়ে গিয়ে নানান রকম বাজে অভিজ্ঞতার
শিকার হয়ে টানা ১২ দিন/রাতের একটি লট করে ঢাকায় ফিরেছিলাম বিনা পারিশ্রমিকে। ব্যাক্তিগত
খরচের টাকাটাও চাইনি ডিরেক্টরের কাছে কারণ তার জন্য ছিলো আমার শ্রদ্ধা ও সম্মান। নিজের
আত্মসম্মান বোধের কথা চিন্তা করে নিজেকে নিজের খরচেই চালিয়েছিম লটটিতে।
যাইহোক অপেক্ষায় ছিলাম পারিশ্রমিকের, ডিরেক্টর অন্যদের পারিশ্রমিক দিলেও
সে আমাকে কোন পারিশ্রমিক দেননি।
কিছু মাস পরে আবার দ্বিতীয় লট করতে ঢাকার বাহিরে যাই পুরো টিম। সেখানেও
অত্যন্ত বাজে অভিজ্ঞতার সাথে টানা ৮ দিন / রাত
শুটিং করে ঢাকায় ফিরেছি বিনা পারিশ্রমিকে।
এবার একজন শিল্পী হয়ে নিজের পারিশ্রমিক দাবি করলে ডিরেক্টর আমাকে বলেন কি
ডকুমেন্টস আছে তোমার কাছে যে তুমি আমার কাছে পারিশ্রমিক দাবি করছো।
এবার আমি কিছু সময় চুপ থেকে তাকে জবাব দিলাম যে "দাদা" আমি আপনাকে
এতো দিন আমার অভিভাবক মনে করেছি। আপনার পিছনে দীর্ঘদিন সময় দিয়ে আপনার ব্যাক্তিগত কাজ
গুলো করে দিয়েছি শুধুমাত্র আপনাকে ভালোবেসেছি বলে বিশ্বাস করেন দাদা যদি আমার টাকা
টা প্রয়োজন না হতো তাহলে আমি আপনার কাছে টাকা কখনই চাইতাম নাহ, সত্যি দাদা আমার কিছু
টাকার খুবই দরকার যদি পারেন আমাকে কিছু টাকা দিয়েন।
আমার এই কথা বলায় সে মিডিয়ার অন্যান্য ব্যাক্তিদের দিয়ে আমাকে উদাহরণ দেয়
যে আমি পারিশ্রমিক দাবি করলে আমি নাকি মিডিয়াতে টিকতে পারবো না।
যে তিনি আমার বিশ্বাস আর ভালোবাসার দুর্বলতার সুযোগটাই কাজে লাগিয়ে এতো
গুলো দিন আমাকে ব্যাবহার করেছে। আমার সময় গুলো নষ্ট করেছে।
কাজের কোন চুক্তি পত্রই সে আমার সাথে করেননি।
আর আমিও ভুল করেছিলাম তাকে ভালেবাসার ফলে ঐ চুক্তি পত্রটিকে গুরুত্ব না
দিয়েই তার প্রতি বিশ্বাস রেখে কাজ করতে গিয়েছি কঠোর পরিশ্রম করেছি।
তারপর আমি বাদ্ধ হয়ে প্রডিউসারের সাথে যোগাযোগ করি ফোন কলের মাধ্যমে তাকে
খুলে বলি আমার সাথে হওয়া ঘটনা গুলো।
সে আমাকে এক কথায় জবাব দেয় যে রাকিব তোর টাকার তো হিসাব হয়েছে প্রথম লটের
টাকাতো আমি দিয়ে দিয়েছি।
তখন আমি তাকে নিজে লজ্জার সাথে বলি যে দাদা সেই টাকা টা আমি পাইনি। যাইহোক
দাদা আপনি এই লটের টাকা টা আমার বিকাশে দিয়েন অন্য কারো হাতে দিয়েন নাহ। তখন সে আমাকে
বল্লো যে রাকিব তুই ভাই কষ্ট পাইছ নাহ। আমি তোকে এবার নিজের হাতে টাকাটা দিবো।
ঈঁদের আগ মুহুর্ত ছিলো বলে টাকাটা সত্যি আমার খুবই প্রয়োজন ছিলো প্রডিউসার
আমাকে আজ না কাল আজ না কাল করতে করতে অনেক দিন ঘুড়িয়ে ঈঁদের আগের দিন আমার বিকাশ নাম্বারে
মাত্র ১ হাজার টাকা পাঠায়।
এক হাজার টাকা পেয়ে আমার মনে হচ্ছিলো যে শিল্পীরা এতোটা মূল্যহীন।
আমার এই স্টাটাস টা যে পরছেন তার বিবেকের কাছে আমার প্রশ্ন যে আমি এই লজ্জাকর
কথা গুলো কার কাছে বলতাম? আমি কার কাছে আমার
দাবির কথা বলতাম? আমার কিছুই করার ছিলে নাহ
আমি চুপ করে ছিলাম এতো গুলো দিন।
কিন্তু আজ লিখলাম কেনো জানেন!
যারা কিনা উচ্চারণ করতে জানেন নাহ
যারা কিনা থিয়েটার করেননি
যারা কিনা অভিনয় জানেন নাহ
যারা কিনা শিক্ষামূলক কিছু করেননা
যারা কিনা ম্যানার জানেন নাহ
যারা কিনা শুধু মাত্র টিক টক করে আমার এই ইন্ডাস্ট্রির সুনাম ধন্য পরিচালকের
এক মাসের অভিনয়ের প্রশিক্ষণ দ্বারা অভিনেতা
হয়ে উঠবেন।
আমার না এই সুনাম ধন্য ডিরেক্টরের উপর রাগ হচ্ছে নাহ বরং আমার নিজেকে নিজের
অসহায় মনে হচ্ছে।
মনে হচ্ছে থিয়েটার করে এখন আর কোন লাভ নেই মনে হয়।
হতে হবে হাস্যকর কোন ব্যাক্তি, তাহলেই ডিরেক্টরের মূল্যবান দৃষ্টি পরবেন।
থিয়েটার কর্মী হয়ে আমিতো কোন মূল্যায়ন পাইনি যা পেয়েছেন টিক টক করে অপু
ভাই।
আমি না কাউকে নিয়ে কোন অভিযোগ করছি নাহ।
আমি শুধু আমার অভিজ্ঞতার কথা বলছি।
আমার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনা গুলো শেয়ার করছি।
আচ্ছা আপনারা কি আমাকে আমার প্রতিবাদের জায়গাটা দেখিয়ে দিবেন যেখানে গিয়ে
আমি আমার প্রতিবাদ টুকু করতে পারবো, বা আমি আমার পারিশ্রমিকটা দাবি করতে পারবো।
আচ্ছা প্রতিবাদটি করার জায়গাটি দেখিয়ে দিয়ে আপনারা কি আমার সঙ্গে থাকবেন! ""কারণ আমার না ভয় করছে যারা আমাকে বা
আমার মত থিয়েটার কর্মীদের যারা ব্যাবহার করছে তারা যদি আমার বা আমাদের কোন ক্ষতি করে।
😐 আমার ধারণা তারা তাদের ক্ষমতা কাজে
লাগিয়ে আমাকে পঙ্গু করে দিতেই পারেন।
এই ভয়টার কারনেই হয়তো কেউ প্রতিবাদ করতে সাহস পায় না।
পুরো ইন্ডাস্ট্রির কাছে আমার দাবি আমি দু বেলা দু মুঠো ভাত খেয়ে এসমাজে
বেঁচে থাকতে চাই নিজের শিল্প চর্চা দিয়ে পারিশ্রমিকটা পেতে চাই। যারা সত্যিকারের শিল্পী
তাদের অভিভাবক চাই।
আমার কথা গুলো সবাই ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আমি কারো বিপক্ষে অভিযোগ করছি
নাহ। আমি শুধুই আমার অভিজ্ঞতার কথা বলছি।
পাশে থাকবেন আপনারা আমাদের। ধন্যবাদ।